সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধি : করোনার ভুয়া নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার অপরাধে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে পাবনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে মুঠোফোনে ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের তথ্য প্রদানকারী পরিচয়ে জানান বিথী।
ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারটি সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার আদেশটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম শামীম।
এর আগে চলতি মাসের ৮ জুলাই সরকারি অনুমোদন ব্যতিরেকে ৫/৬ হাজার করে টাকা নিয়ে ভুয়া নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার দায়ে রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের মালিক মো. আব্দুল ওহাবকে প্রধান আসামি করে ঈশ্বরদী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় বর্তমানে রানা পাবনা জেল হাজতে রয়েছেন।
সরেজমিনে বুধবার দুপুরে রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ভিতর থেকে মেডিকেয়ারের দ্বিতীয় ফটকটি বন্ধ রয়েছে। মেডিকেয়ার সংলগ্ন এলাকাবাসীরা জানান, সকাল থেকে মেডিকেয়ারটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মেডিকেয়ারের দোতলায় ভবনের মালিক পরিবার নিয়ে বসবাস করায় ফটক মাঝে মাঝে খুলতে দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প (আরএনপিপি) সংলগ্ন রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের মালিক মো. আব্দুল ওহাব রানা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধিনস্থ পাবনা সিভিল সার্জনের অনুমোতি না নিয়ে অবৈধভাবে আরএনপিপিতে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারী ও নতুন চাকরি প্রত্যাশিতদের করোনা-১৯ নমুনা সংগ্রহ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদান করে আসছিলেন। প্রতি টেস্টের জন্য তিনি ৫/৬ হাজার করে টাকা নিতেন।
সূত্রগুলো আরো জানায়, চলতি মাসের গত ৪ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মেডিকেয়ার মালিক রানা প্রকল্পের দক্ষিণপাশে তাবু টাঙ্গিয়ে প্রকল্পে কর্মরত ও নতুন চাকরি প্রত্যাশিত কয়েক হাজার শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহ করেন। বিষয়গুলো থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তার নজরে আসলে সিভিল সার্জনের নির্দেশে রানাকে গত ৭ জুলাই আটক করা হয়।
পরে তার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ১৪০টি নতুন নমুনার অ্যাম্পুল, বেশ কিছু টেস্টের অনলাইনে পাওয়া নেগেটিভ রিপোর্ট ও তার ল্যাপটপটি জব্দ করা হয়।
আরএনপিপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে করোনা-১৯ ভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে আরএনপিপি প্রকল্পে করোনা টেস্ট ছাড়া কাজ করা যাবে না বলে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এই সুযোগে প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ানদের বিভিন্ন সাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের করোনা বাধ্যতা মূলক হয়ে পড়ে। কিন্তু সরকারিভাবে করোনা টেস্টের জটিলতা ও সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগটি রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের মালিক গ্রহণ করেন।
তাই নিয়ম কিংবা অনুমোতির তোয়াক্কা না করে গোপনে নমুনা সংগ্রহ ও কয়েকশত জাল নেগেটিভ রিপোর্ট শ্রমিক কর্মচারীদের প্রদান করেছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম শামিম আরও জানান, রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার জন্য পাবনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে নির্দেশনা এসেছে। নির্দেশনাটি মেডিকেয়ার কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি সেখ মো. নাসীর উদ্দীন জানান, রূপপুর মেডিকেয়ার ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com