বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধি : পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায় ও কলেজ পরিচানায় ব্যাপক দূর্ণীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাটমোহর ডিগ্রী (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কলেজ ৬ শাখা’র গত ১৬ আগষ্ট সিনিয়র সহকারী সচিব নাছিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর সিনিয়র সিস্টেম এনলিস্ট-কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ‘পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলাধীন চাটমোহর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান-এর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে পরবর্তী ২০ (বিশ) দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চাটমোহর ডিগ্রী অনার্স কলেজে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বিপুল পরিমান অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জারীকৃত নীতিমালা উপেক্ষা করে সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে এবং মফস্বল এলাকার গরীব ছাত্র ছাত্রীরা বাধ্য হয়েছেন কলেজ কর্তৃক ধার্যকৃত অতিরিক্ত ফি দিয়ে ফরম পূরণ করতে।
এ নিয়ে চাটমোহরে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার ঝড়। রেহাই পায়নি গরীব মেধাবী উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীরাও।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে উক্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী মোছাঃ রাবেয়া খাতুন (রোল নং ৩৩৭) অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লিখিত অভিযোগ ৩১ জানুয়ারী চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন।
ওই আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাবেয়া খাতুন ফরমফ্লাপ করতে গেলে পরীক্ষার ফি বাবদ তার নিকট থেকে ১১৭৭ নং রশীদ মূলে ৬ হাজার ৫শ টাকা এবং কোচিং না করিয়েই ১০৮৯ নং রশীদ মূলে কোচিং ফি বাবদ ৩০০ টাকা (সর্বমোট ৬ হাজার ৮শ) টাকা জোরপূর্বক আদায় করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি অনৈতিক ও বিবেক বর্জিত এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতি পরিপন্থী হওয়ায় চাটমোহর ডিগ্রী অনার্স কলেজ কর্তৃপক্ষের অনৈতিক এ কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
গত ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহী এর চেয়ারম্যানের আদেশ ক্রমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুন কুমার সরকার ২০১৭ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
তরুণ কুমার সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি নং রাশিবো/উমা/পনি-১৬২ মোতাবেক ১৩ নং ক্রমিকের মাধ্যমে জানানো হয় প্রতি পত্রে/ বিষয়ের পরীক্ষা ফি ৯০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষা ফি প্রতি বিষয়/ পত্রে ২৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা।
চাটমোহর ডিগ্রী অনার্স কলেজ এসব নিয়ম নীতি না মেনে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর চেয়ে চার-পাঁচ গুন অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমানকে (বর্তমানে ইউএনও কেশবপুর, যশোর) তদন্তের দায়িত্ব দেন।
তদন্ত শেষে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।
চাটমোহরের অভিভাবক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু চাটমোহর ডিগ্রী কলেজ নয় উপজেলার অন্যান্য সকল কলেজেই চলছে এ রকম কর্মকান্ড।
তারা চাটমোহর উপজেলার সকল কলেজের অনিয়ম, পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি আদায়, দূর্ণীতির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com