বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১, ০৩:০৮ অপরাহ্ন
দখল–দূষণে মৃতপ্রায় আত্রাই। ছবি: সংগৃহীত
সাঁথিয়া প্রতিনিধি: সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুরে আত্রাই নদ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অবৈধ স্থাপনা। ব্যাপক দখল আর দূষণের কারণে একসময়ের খরস্রোতা নদটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার পথে। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও কাশীনাথপুর হাটের পাশে আত্রাই দেখতে সরু নালার মতো রয়েছে।
আত্রাই নদ সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতী নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে বেড়া উপজেলার মাসুন্দিয়া ইউনিয়নে গিয়ে বাদাই নদে মিশেছে। কাশীনাথপুরের ট্রাফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশে আত্রাই কমবেশি দখলের শিকার হয়েছে। তবে নদটি সবচেয়ে বেহাল কাশীনাথপুর হাট-সংলগ্ন অংশে। দখলের কারণে ওই স্থানে নদটিকে এখন খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কাশীনাথপুরের অবস্থান পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে। তবে নদ দখলের স্থানসহ বাজারের ব্যবসাকেন্দ্রের বেশির ভাগই পড়েছে সাঁথিয়ার মধ্যে। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় স্থানটি জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ফলে কাশীনাথপুর হাট এলাকায় জায়গা-জমির দাম আকাশচুম্বী। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদের জায়গা ইচ্ছামতো দখল করে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন।
২৩ জুলাই সরেজমিনে দেখা যায়, কাশীনাথপুর হাটের পাশে আত্রাই নদের দুপাশেই ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ অর্ধশতাধিক পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা। বেশির ভাগ স্থাপনাতেই রয়েছে দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অর্ধশতাধিক স্থাপনা হলেও সেগুলোর দখলকারী ৮ থেকে ১০ জন বলে জানান এলাকাবাসী।
কাশীনাথপুর হাটের একাংশে গিয়ে দেখা যায়, নদের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট সেতু। সেতুর দুই দিকে নদের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত পাকা রাস্তা। সেই রাস্তার দুপাশে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। ওই স্থানে গিয়ে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে একটি নদ আছে। দখলের পাশাপাশি নদের একেবারে মাঝ বরাবর ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। এতে মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে আত্রাই।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, দখলের মহোৎসব শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। ওই সময় স্থানীয় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান জালালউদ্দিন মিয়ার উদ্যোগে সরকারি অর্থে আত্রাই নদের ওপর ওই সেতু ও রাস্তা নির্মিত হয়। নির্মাণের পরপরই তিনি রাস্তার দুপাশ দখল করে সাত-আটটি দোকান গড়ে তোলেন। তাঁর দেখাদেখি দখলের হিড়িক পড়ে যায়।
তবে জালালউদ্দিন বলেন, ‘নদীর বুকের ওপর যে রাস্তা ও সেতুর কথা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি সরকারি। এসএ, ডিএসসহ সরকারি বিভিন্ন রেকর্ডে রাস্তা হিসেবে এর উল্লেখ আছে। আর সেখানে আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে দোকানপাট গড়েছি। নদীর এক ইঞ্চি জায়গাও দখল হয়নি। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে একটি মহল নদী দখলের মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
দখলের অভিযোগ রয়েছে এমন আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা হয় মোহাব্বত আলী নামের একজনের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, যে জায়গায় তিনি বাড়ি ও দোকান গড়ে তুলেছেন, সেটি ১৯৯০ সালে কেনা। জায়গাটি অনেক আগে হাটের জায়গা হিসেবে রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল। তবে আগের মালিক আদালতে মামলা করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা হিসেবে রায় পান। আর নদ দখলের যে কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ, নদ তাঁর স্থাপনা থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে।
এদিকে নদের ঠিক কী পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কাশীনাথপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুস সালাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদী ছোট হয়ে গেছে এ কথা ঠিক। তবে কতটুকু জায়গা দখল হয়েছে, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পাবনা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল করিম বলেন, ‘ভূমিদস্যুদের কারণে স্রোতোস্বিনী আত্রাই নদ আজ মৃতপ্রায়। আমরা আত্রাইকে রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে এসেছি। এখন সরকারি উদ্যোগ আশা করি।’
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে নদটি দখল করা হয়েছে, সরেজমিনে তা দেখে মর্মাহত হয়েছি। নদটিকে দখলমুক্ত করতে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com