শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর (পাবনা) : পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাবনার চাটমোহর উপজেলার গ্রামে গ্রামে কুমার বাড়ির উঠোন ভরে গেছে মাটির তৈজসপত্রে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এসব পণ্যে’র চাহিদা এখন বেশি। মৃৎশিল্পিরা এখন তৈরী মাটির তৈজসপত্রে রঙ তুলি শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার কালীনগন গ্রামের মৃৎশিল্পী মনিন্দ্র নাথ পাল জানান, সংসারে ওদের অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করতেই তাদেরকে হিমশিম খেতে হয়। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে পেট চালানোই দায়। ছেলে-মেয়েদের তাই স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয় না।
সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব ও দেশে আধুনিক তৈজসপত্র বাজার দখল করে নেওয়ায় চাটমোহর উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবারের জীবন-জীবিকার দূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন।
তারা জানায়, এক সময় চলনবিল অধ্যুষিত এ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষ মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই ও থালা বাসন ব্যবহার করত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক শিল্প বাজার দখল করে নেওয়ায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি আজ ধ্বংসের পথে। আর সেই সাথে এর সাথে জড়িত মানুষগুলোর রুটি-রোজগারও প্রায় বন্ধের দিকে। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে অনেক কষ্টে এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই । অনেকে তাই পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বিধবা অঞ্জলী রানী পাল, শান্তনা পাল, সুনিল চন্দ্র পাল, লিটন চন্দ্র পালসহ একাধিক মৃৎশিল্পীরা জানায়, এটা বাপ-দাদার পৈতৃক পেশা। দীর্ঘদিন মৃৎশিল্পের উপর নির্ভরশীল তারা। তবে আগের মত মাটি ফ্রি পাওয়া যায় না।
এছাড়া মাটি, রং, লেবার, জালানি প্রভৃতির সংগ্রহ মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। সে অনুযায়ী মাটির জিনিস পত্রের দাম বাড়েনি। তারপরও তারা বাপ দাদার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃৎশিল্পীরা তাদের পরিবার পরিজনরা আজও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ।
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে উপজেলার কুমার পল্লীগুলোর বাড়ির উঠোন ভরে গেছে মাটির তৈজসপত্রে। মাটির তৈরী গহনা, ব্যাংক, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। পহেলা বৈশাখে এগুলোর চাহিদা বেড়ে যায় বলে আগের থেকেই চলে তাদের নিপুন হাতে তৈরি তৈজসপত্র তৈরির কাজ।
এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের সুযোগ করে এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের জীবিকার পথ প্রসারিত করতে সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল ।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com