মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
পাবনায় পিডিবিতে গণছুটি, গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে
শহর প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল ভেঙে কোম্পানিতে রূপান্তর করার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার থেকে পাবনায় কর্মরত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বেচ্ছায় তিন দিনের গণছুটিতে গেছেন। এতে বিদ্যুৎবিভ্রাটসহ বিভিন্ন সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিডিবির রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল বাংলাদেশের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে শীর্ষ রয়েছে। অঞ্চল দুটিতে সিস্টেম লসও কম।
এরপরও অজ্ঞাত কারণে বৃহত্তর দুটি বিভাগকে সরকার কোম্পানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে সীমাহীন সিস্টেম লস, গ্রাহক হয়রানি ও শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে গত ৩১ জুলাই থেকে পাবনার বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ২০০ কর্মকর্তা কর্মচারী আন্দোলন শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যেই তাঁরা অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এতেও প্রক্রিয়া বন্ধ না হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে স্বেচ্ছায় তিন দিনের গণছুটি নিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কোম্পানীকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে তাঁদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের পর ১৬ আগস্ট আরও বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই অব্যাহত আন্দোলন ও গণছুটিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাটসহ দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। গত দুই দিনে আট-দশজন গ্রাহক ফোন দিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্দোলন-সংগ্রাম শুরুর পর থেকেই পিডিবির বিপণন, বিতরণসহ কোনো বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন না।
এর ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ট্রান্সফরমার বিকল, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ বিভিন্ন সমস্যায় বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। অভিযোগ কেন্দ্রে বারবার ফোন দেওয়া হলেও কেউ তা আমলে নিচ্ছেন না। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত পাবনা বিসিক শিল্পনগরী এলাকার প্রতিটি কলকারখানাকে বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়েছে।
এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে টানা প্রায় ৩৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থেকেছে জেলা সদরের রাধানগর মহল্লার বাসিন্দারা। পরে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে কর্মচারীদের দিয়ে ট্রান্সফরমার ঠিক করিয়ে নিয়েছেন।
রাধানগর জামাইপাড়া মহল্লার রাজিউর রহমান জানান, হঠাৎ করে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় তার পাঁচতলা বাড়ি পানিশূন্য হয়ে পড়েছিল। রাতভর বাইরে থেকে পানি টেনে এনে বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে।
বিসিক শিল্প এলাকার ছয়-সাতজন শিল্প উদ্যোক্তা জানান, বিদ্যুৎবিভ্রাটের জন্য প্রতিটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। শ্রমিকেরা শুয়ে-বসে সময় পার করেছেন। এতে কারখানার মালিকদের প্রচুর লোকসানসহ পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে।
গ্রাহকের ভোগান্তির স্বীকার করে পিডিবি পাবনা অঞ্চল-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশব্যাপী এই আন্দোলন চলছে। কেউ কারও কথা শুনছেন না।
গ্রাহকের ভোগান্তি বিবেচনা করে আমরা কাউকে কোনো নির্দেশ দিলে তাঁরা তা মানছেন না। ফলে কিছুই করা যাচ্ছে না।’
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com