বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর, পাবনা : ১৯৯০ সালে যখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী ঠিক তখনই চাটমোহরের ধরইল গ্রামের ফিরোজ কবীরের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।
ভেবেছিলাম জীবনের সব স্বপ্নই বুঝি মিথ্যে হয়ে গেল। আর বোধ হয় এগুতে পারবো না, এমন দুশ্চিন্তা প্রায়শই আমাকে গ্রাস করতো। আমি এসএসসি পাশ করার পর বড় ছেলে তুষারের জন্ম হয়।
পরিবারের সহায়তা পেলে একটা থমকে যাওয়া জীবনও যে আবার গতিশীল হতে পারে হয়তো আমি তারই দৃষ্টান্ত।
পাবনার চাটমোহরের একজন নারী উদ্যোক্তা প্রভাষক হাসনা হেনা কথাগুলো বলার সময় হয়তো চলে গিয়েছিলেন তার সেই ফেলে আসা সুদুর অতীতে।
পাবনার চাটমোহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত প্রডেস হোম ডেকর নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা।
খাট, আলমীরা, সোফা, দড়জা, ওয়াল ফার্নিচার, কমফোর্টার, সোফার ফোম, কভার, বিছানার চাদর, দরজা-জানালার পর্দা, পাপোশ, ফ্লোরম্যাটসহ গৃহসজ্জার যাবতীয় জিনিষ বিক্রি করেন তিনি।
চাটমোহরের মতো ছোট শহরে নারীরা এখনও যখন গৃহমুখী এমন সময় হাসনা হেনার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।
হাসনা হেনা জানান, আমি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু পড়া লেখা ছাড়িনি। বিয়ের পর ১৯৯২ সালে হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ১৯৯৪ সালে চাটমোহর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি, ২০০০ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন, ২০০৯ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করি। এর মধ্যেই আমি দুই ছেলের মা হয়ে যাই।
কর্মজীবনে ২০০৩ সালে চাটমোহরের এনায়েতুল্লাহ ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে যোগদান করি।
এর পর ২০১১ সালে সেন্ট রিটার্স উচ্চবিদ্যালয়ে একই পদে যোগদান করি। সব শেষে ২০১৫ সালে চাটমোহর মহিলা ডিগ্রী কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করি।
২০১৯ সালে এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালে নিজেদের বাড়ির সামনের অংশে স্বামীর সহায়তায় প্রডেস হোম ডেকর নামের এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করি।
এতে এক দিকে লাভ পাচ্ছি অন্যদিকে অবসর সময় কাটাতে পারছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এই ভেবে ভাল লাগে যে আমার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঢাকার যে মালামাল বিক্রি করি অনলাইনে সেগুলির অর্ডার দেই।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন জানান, ছোট বেলা থেকেই হাসনা হেনাকে চিনি ও জানি। খুব অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। সব সময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সে।
তাই কোন বাধাই তাকে দমাতে পারে নি। সংসার পড়ালেখা সন্তান সামলানো এক সাথে সবই করতে হয়েছে তাকে। আজ সে একজন সফল উদ্যোক্তা। এ দৃষ্টান্ত অন্যদের অনুপ্রাণীত করবে।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com