বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
আটঘরিয়া প্রতিনিধি : পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা থেকে একটি মেছো বিড়াল (স্থানীয় ভাষায় ‘মেছো বাঘ’) আটক করেছে এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ভোরে উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের মাজপাড়া মন্ডলপাড়া গ্রামের একটি বাঁশঝাড় থেকে পোষা কুকুরের সহায়তায় একটি মেছো বাঘ আটক করে এলাকাবাসী।
তবে ওই বাঘটি নিজ দায়িত্বে বন বিভাগের কাছে পৌঁছানোর কথা বলে সেটিকে জিম্মায় নেন আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম।
কিন্তু তারপরই বিড়ালটির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী রেজাউল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) প্রাণীটি স্থানীয় একটি বাঁশঝাড়ে ঢুকে একটি বাশেঁর ওপর উঠে। পরে স্থানীয়রা কৌশলে বাঁশের সাথে দঁড়ি পেঁচিয়ে সেটিকে আটক করে ও মসজিদের একটি পুরাতন খাঁচায় বন্দী করে রাখে।
এ খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দেখতে আসতে শুরু করে।
এর কিছুক্ষণ পরই আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম পৌরসভার একটি ট্রাকসহ সরকারি জীপে ঘটনাস্থলে আসেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে সেটি বন বিভাগে জমা দেওয়ার কথা বলে নিজেই গাড়িতে করে নিয়ে যান।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাণীটি হারিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে সেটি গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তানভীর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সামাজিক বনায়নের পাবনাস্থ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রাণীটিকে আটকের পর উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম নিজ দায়িত্বে আনছিলেন। কিছুপথ আসার পর সেটি নাকি পালিয়ে গেছে।
প্রাণীটি পালিয়ে গেছে নাকি ভেতরে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে, এমন প্রশ্নে বন কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান বলেন, যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত করে মূল ঘটনা অনুসন্ধান করা হবে।
এদিকে, পরিচয় নিশ্চিত হতে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির অনলাইন গণমাধ্যম থেকে প্রাণীটির ছবি পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলাকে।
তিনি প্রাণীটি মেছো বিড়াল বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, মেছো বিড়ালকে (Fishing Cat) অনেক এলাকায় মেছোবাঘ নামেও ডাকে। এর প্রকৃত নাম মেছো বিড়াল। বাঘ নামে ডাকার কারণে শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না, বরং মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। তাই এটি নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটি বিচরণ রয়েছে। জলাভূমি আছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়।
প্রাণীটি জলাভূমির মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ছাড়াও পোকামাকড় ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে মেছো বিড়ালকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে আইইউসিএন।
তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত। তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com