সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি : পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাংড়াগাড়ি গ্রামে সিদীপ নামের একটি এনজিও’র কিস্তির চাপে সাবিনা খাতুন (৩৫) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে।
নিহত সাবিনা একই উপজেলার বিএলবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং হাংড়াগাড়ি গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী।
নিহতের পরিবারের দাবি, কিস্তির জন্য এনজিও কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে চাপ দিলে সাবিনা তার নিজ ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হাফিজুল ইসলাম তার স্ত্রী সাবিনা খাতুনের নামে গত বছরের আগস্ট মাসে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন এন্ড প্রাক্টিসেস (সিদীপ) এনজিও ভাঙ্গুড়া ব্রাঞ্চ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বামী হাফিজুল ইসলামের আয় রোজগার কমে যায়।
এমতঅবস্থায় গত পাঁচ মাসের কিস্তি বকেয়া পড়ে এই দম্পতির।
মঙ্গলবার সকালে সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মী আরিকুল ইসলাম ও রায়হান কবির হাফিজুলের বাড়িতে উপস্থিত হন।
বাড়িতে হাফিজুল অনুপস্থিত থাকায় বকেয়া সম্পূর্ণ কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য সাবিনাকে চাপ দেন সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মীরা।
এ নিয়ে এনজিও কর্মীদের সাথে বাকবিতন্ডা হয় সাবিনার। একপর্যায়ে সাবিনা ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক এনজিওকর্মীরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
পরে স্বজনরা সাবিনাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা
করেন।
নিহতের দেবরের স্ত্রী শেলী খাতুন জানান, কিস্তির স্যাররা আমার ভাসুরের স্ত্রীর কাছে কিস্তির টাকা চাইলে দেরি হবে বলে জানায়।
এনিয়ে কিস্তির স্যাররা তাকে নানাভাবে কটূক্তি করে। তখন
তাদেরকে বাড়ির উঠানে রেখে সাবিনা ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দেয়।
সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মী আরিকুল ইসলামের মুঠোফোনে জানতে চাইলে সংবাদকর্মীর পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সিদীপের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূ নিজে থেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য আমাদেরকে ডেকেছিল।
তাই তার বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তার সাথে আমাদের কোন বাকবিতন্ডা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই গৃহবধূ সবার অলক্ষ্যে নিজ ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই নাজমুল কাদের বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার বিষয়টি জানালে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পাবনা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, কিস্তি দিতে না পারায় গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিস্তির জন্য চাপ দেওয়া আইন বিরোধী কাজ করেছে অভিযুক্ত এনজিও।
তাই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com