বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১, ০৫:১০ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক : পবিত্র ঈদুল ফিতর এলেই লুঙ্গির চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এবার শুধু চাহিদা বাড়েনি, দামও বেড়েছে। তাই ভালো লাভ পাওয়ায় পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার তাঁতমালিকদের মুখে এবার চওড়া হাসি। কিন্তু তাঁতশ্রমিকদের মুখে হাসি নেই। ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় ঈদের কেনাকাটা দূরের কথা, ঠিকমতো সংসারই চলছে না তাঁদের।
তাঁতি ও তাঁতশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা লুঙ্গি তৈরির জন্য সারা দেশে বিশেষভাবে খ্যাত। দুই উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার তাঁতশ্রমিক লুঙ্গি তৈরির সঙ্গে জড়িত। এসব তাঁতশ্রমিকের এখন দম ফেলার সময় নেই। দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে লুঙ্গি তৈরিতে ব্যস্ত তাঁরা।
বেড়া পৌর এলাকার হাতিগাড়া মহল্লার তাঁতশ্রমিক সাচ্চু মিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘সকাল সাতটা থ্যা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত একটানা কাম করি। মজুরি পাই ১৫০ টাকার থ্যা ২০০ টাকা। পাঁচজনের সংসার এই টাকায় চলে না। সামনে ঈদ। ছাওয়ালডা জামার আবদার করিছে। কিন্তু দেব কোন থ্যা?’
একই মহল্লার আরেক তাঁতশ্রমিক আবদুস সামাদ বলেন, ‘আমি সারা দিনে তিনটা লুঙ্গির বেশি বুনতে পারি না। এতে লুঙ্গিপ্রতি ৫০ টাকা হিসাবে ১৫০ টাকা পাই। আমাগরে ঈদ হবি কীরম কইর্যান?’
তাঁতশ্রমিকেরা জানান, তাঁতমালিকদের কাছ থেকে তাঁরা প্রতিটি মোটা লুঙ্গির জন্য ৫০ এবং চিকন লুঙ্গির জন্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে পারিশ্রমিক পান। একজন তাঁতশ্রমিক দিনভর কাজ করে সর্বোচ্চ চারটি মোটা অথবা তিনটি চিকন লুঙ্গি বুনতে পারেন।
তাঁতশ্রমিকেরা জানান, তাঁত বোনা অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ। একটানা মাকু টানতে হয় বলে বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ে।
সাঁথিয়ার ছেঁচানিয়া গ্রামের তাঁতশ্রমিক বদরুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘একজন রিকশাওয়ালা দিনে ৪০০ টাকার থ্যা ৫০০ টাকা কামাই করে। অথচ আমরা এত পরিশ্রম ও কষ্ট করে তার অর্ধেকও পাই না।’
সরেজমিনে উত্তরাঞ্চলের প্রধান পাইকারি কাপড়ের হাট পাবনার আতাইকুলা ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার লুঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি। শাহজাদপুর হাটের অন্যতম পাইকারি লুঙ্গিবিক্রেতা বেড়া উপজেলার আকতারুজ্জামান বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রতি থান (চারটি) লুঙ্গির দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে।
তবে চার থেকে পাঁচজন তাঁতমালিক জানান, বর্তমান বাজারদরে কিছুটা লাভ হলেও সারা বছরের হিসাব অনুযায়ী তাঁরা এখনো লোকসানে রয়েছেন। এ ছাড়া ঈদের পর লুঙ্গির দাম কমে যেতেও পারে। তাই সব মিলিয়ে তাঁতশ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানো সম্ভব নয় বলে তাঁরা জানান।
বেড়া উপজেলার হাতিগাড়া মহল্লার একটি তাঁত কারখানার মালিক ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিকগরে মজুরি বাড়াবার চাই। কিন্তু বাড়ানোর মতো অবস্থা কারোরই নাই। আমার কারখানায় ১২টা তাঁত ছিল। গত চার-পাঁচ বছরে লোকসান খায়া আটটা তাঁতই বিক্রি কইরা দিছি। এখনো মহাজনের কাছে চার লাখ টাকা দেনা।’
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com