রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
শহর প্রতিনিধি, পাবনা : উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার আধুনিক বাংলা গানের যুগশ্রষ্ঠা গৌরী প্রসন্ন মজুমদার স্মরণে ও তাঁর ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রেসক্লাবের আয়োজনে গান আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ প্রখ্যাত এই গীতিকারের পৈত্রিক বাড়িটি উদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাবনার ফরিদপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১৯৮৬ সালের ২০ আগষ্ট।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ২০১২ সালে ‘‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’’ জানানো হয়। ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগরে তাঁর পৈত্রিক বাড়িটি এখন ধ্বংশের শেষ প্রান্তে।
বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগতকে যাঁরা প্রেমাবেগে উষ্ণ রেখেছিলেন, গৌরি প্রসন্ন মজুমদার ছিলেন তাঁদের একজন।
বাণী আর ছন্দের অভাবনীয় মেলবন্ধনে, কখনো উত্তম-সুচিত্রার ঠোঁটে, কখনো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, শচীন দেব বর্মন কিংবা আশা ভোঁসলের কন্ঠে তার লেখা গান বাঙালীকে আজও নিয়ে যায় স্বপ্নের দুনিয়ায়।
জনপ্রিয় এই গীতিকারের স্মৃতি তুলে ধরতেই প্রেসক্লাব ‘গান আড্ডার’ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় সব গানের ফাঁকে ফাকে চলে আলোচনা।
আলোচনা পর্বে প্রেসক্লাব সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ও পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেসক্লাব সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ ও প্রথম আলোর পাবনা জেলা প্রতিনিধি সরোয়ার মোর্শেদ উল্লাস।
বক্তরা জানান, গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের বাবা গিরিজ প্রসাদ মজুমদার ছিলেন উদ্ভিদ বিদ। ছেলে লেখাপড়ায় ভালো জন্য তিনি তাকে কলকাতায় পাঠান।
দেশ বিভাগের কিছু আগে গৌরী প্রসন্ন কলকাতা থেকে ফিরে আবার পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫১ সালে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। পরে আবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্র্রি লাভ করেন।
দেশবিভাগের পর ১৯৬৫ সালে স্বপরিবারে চলে যান ওপার বাংলায়। পরে তাঁদের পৈত্রিক বাড়িটি ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করা হয়।
বক্তব্যে এম সাইদুল হক বলেন, পাবনার মানুষ শিল্প-সাহিত্য মনা। পাবনার মানুষই মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্ধার করেছে। আমরা চাইলে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের বাড়িও উদ্ধার করতে পারবো। সবাই সে লক্ষ্যে ঐক্যবন্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, গুনির কদর করতে হবে। গৌরী প্রসন্ন মজুমদার একজন গুনি মানুষ। আমাদের গর্ব। তাই তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা অবিলম্বে এই গুনির পৈত্রিক বাড়িটি উদ্ধার ও সেখানে তাঁর নামে একটি সঙ্গীত একাডেমী করার দাবি জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, অনেকেই গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কাল জয়ী গান শুনে মনের তৃষ্ণা মেটান। কিন্তু গানটি কার লেখা, সুরকরা তা জানেন না। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর স্মৃতি তুলে ধরতেই আমাদের এই আয়োজন।
আমরা চাই এখান থেকেই প্রখ্যাত এই গীতিকারের পৈত্রিক বাড়ি উদ্ধার আন্দোলনের সুচনা হোক।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গৌরী প্রসন্ন মজুমদার শেষ পাবনায় এসেছিলেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ২০ আগষ্ট কলকাতায় মারা যান ।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com