মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
পাবনা জেলা প্রতিনিধি : পাট অধিদপ্তর পাবনা জেলার মুখ্য পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, গোপন চুক্তি অনুযায়ী মাসোহারার টাকা দিতে দেরি হলেই ভ্রাম্যমান আদালতকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মো: খায়রুল ইসলাম সোমবার (২৪ অক্টোবর) ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পাট অধিদপ্তর পাবনা জেলার মুখ্য পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও চাউল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৯শে অক্টোবর দুপুরে ব্যক্তি বিশেষের ইন্ধনে হাজ্জাজুর রশীদ ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে ঈশ্বরদীতে খায়রুল এগ্রো ফুড ও সরদার এগ্রো ফুড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমান আদালতের ব্যাপারে কোন অভিযোগ না থাকলেও হাজ্জাজুর রশীদ এর উপস্থিতির কারণে মোকামের শত শত ব্যবসায়ী ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানেই বিক্ষোভ করেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায় ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহমুদের নেতৃত্বে জয়নগর এলাকায় পাটজাতমোড়ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন বাস্তবায়নের জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শুরু হয়।
অভিযানে পাট অধিদপ্তর পাবনা জেলার মুখ্য পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদ সনাক্তকারী হিসেবে এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমান আদালত প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের দায়ে তাৎক্ষণিক জয়নগরে খায়রুল রাইচ এজেন্সিকে ২০ হাজার ও সরদার রাইচ মিল মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক’শ চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সমাবেত হয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের হাকিমের নিকট জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদের অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ করেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করার অনুরোধ জানান।
এ পরিস্থিতিতে আদালতের হাকিম ইউএনও শাকিল মাহামুদ উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ দেন, প্রমাণ হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া জব্দ করা বস্তা গোপনে বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদের বিরুদ্ধে।
ঈশ্বরদী উপজেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সরদার এগ্রো ফুডের সত্বাধিকারী হুমায়ন কবির দুলাল জানান, জেলা পাট মুখ্য পরিদর্শক বেশ কয়েকবার তাঁর প্রতিষ্ঠানে এসেছেন বস্তা বিক্রির জন্য। দাম বেশি হওয়ায় তিনি সেই বস্তা নেননি।
একই কথা জানান, খায়রুল এগ্রো ফুডের বিক্রয় প্রতিনিধি সজিব সরদার। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পাবনার লাইব্রেরী বাজারে খায়রুল এগ্রো ফুডের ১ থেকে ৫ কেজি ওজনের প্যাকেট চাউল বিক্রি করতে গেলে ওই অসাধু কর্মকর্তা হাজ্জাজুর রশীদ তার কাছে উৎকোচ দাবী করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও খায়রুল এগ্রো ফুডের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, সরকারী নির্দেশনা মেনেই প্লাষ্টিকের বস্তা বর্জন করে আমরা চটের বস্তা ব্যবহার শুরু করেছি।
কিছু পুরাতন বস্তা থাকার কারণে জরিমানা দিতে হয়েছে। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য কতিপয় চক্রের ইন্ধনে এমন কাজ করা হয়েছে, যা সতিই দুঃখজনক।
ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানকে স্বাগত জানালেও তাদের সাথে আসা হাজ্জাজুর রশীদ এর মতো অসাধু ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার উপস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউএনও শাকিল মাহমুদ জানান, অভিযান পরিচালনার সময় মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠানে জরিমানা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত পাট অধিদপ্তর পাবনা জেলার মুখ্য পরিদর্শক হাজ্জাজুর রশীদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ব্যবসায়ীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প সাজিয়ে অপপ্রচার করছে। আইন বাস্তবায়নের জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমি প্রসিকিউশন দাখিলকারী কর্মকর্তা। প্রসিকিউশনের ভিত্তিতে ম্যজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com