রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
বুধবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলেও প্রশাসনের অনুরোধে দুপুরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক, পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলামের ব্যক্তিগত কার্যালয়, বাস ও বাইকে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরে নেতৃত্ব দানকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনকে গ্রেফতার না করায় ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
ট্রাক ও সিএনজি ছাড়া সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে হামলা-পাল্টা হামলা ও পুলিশকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী, ক্যাডারের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
বুধবার দুপুরে পুলিশ চারমাথা এলাকায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কার্যালয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে।
জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব দখল নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। একপক্ষে মালিক গ্রুপের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ও অপরপক্ষে সাবেক আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিপক্ষ গ্রুপ শহরের চারমাথা এলাকায় আমিনুল গ্রুপের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।
আমিনুলের অফিস ভাংচুরের পর অগ্নিসংযোগ এবং ৩-৪টি বাস ভাংচুর, পরিবহন মালিকদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শটগানের ২২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। দুইজন গুলিবিদ্ধসহ সাতজন বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার বজলুর রশিদের নেতৃত্বে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
এ হামলার ঘটনায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ হামলায় নেতৃত্বদানকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহবায়ক মঞ্জুরুল আলম মোহনকে গ্রেফতারে বুধবার সকাল পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়। প্রশাসন মঞ্জুরুল আলম মোহনকে গ্রেফতার না করায় পরিবহন মালিক শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন।
এতে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনগণ টার্মিনালে এসে ফিরে যান। তাদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা বা ট্রাকে যাতায়াত করতে হয়। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে।
সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ দুপুরে তার কার্যালয়ে পরিবহন মালিকদের ডেকে আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। এতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুরে শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গ্রুপের ওপর প্রতিপক্ষ মঞ্জুরুল আলম মোহন গ্রুপের হামলার সময় বিশেষ শাখার পুলিশ কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশকে হত্যাচেষ্টা করায় ইন্সপেক্টর নান্নু খান সদর থানায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আড়াইশ’ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছেন।
মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে তার ব্যক্তিগত অফিস, গাড়ি, মোটর সাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মঞ্জুরুল আলম মোহনকে প্রধান আসামি করে ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন।
এছাড়া মঞ্জুরুল আলম মোহনের পক্ষে তার ছোট ভাই মশিউল আলম দীপন বাদী হয়ে তাদের পেট্রল পাম্প ভাংচুর ও বাস ভাংচুরের অভিযোগে আমিনুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে শতাধিক নেতাকর্মীর নামে পাল্টা মামলা করেছেন।
সদর থানার এসআই সোহেল রানা জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত শাহ ফতেহআলী পরিবহনের কার্যালয়ের বারান্দা থেকে বুধবার দুপুরে তিনটি ককটেলসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্তের পর তিনি মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছেন।
আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, মঙ্গলবার দুপুরে মোহন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি ককটেল চার্জ করে। উদ্ধার হওয়া ককটেলগুলো অবিস্ফোরিত।
সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, মঙ্গলবার দুপুরে চার মাথা এলাকায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপারের অনুরোধে পরিবহন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দুপুরে প্রায় সাত ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে মঞ্জুরুল আলম মোহনের পক্ষে পরিবহন ব্যবসায়ী ফটিক অধিকারী বুধবার দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মালিক গ্রুপের গাড়ি ও অন্যান্য জিনিসপত্র আনতে চার মাথায় গিয়েছিলেন। কিন্তু আমিনুল গ্রুপ এর আগেই সেখানে সন্ত্রাসী বাহিনী মোতায়েন করেন। ফলে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ সময় পুলিশ তাদের নেতা মোহনকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও জানান, তাদের সঙ্গে সবাই পরিবহন মালিক-শ্রমিক নয়, অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। গত মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য তিনি আমিনুল ইসলাম ও তার লোকজনকে দায়ী করেছেন।
তবে আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে মোহন গ্রুপের বক্তব্য দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি অবিলম্বে হামলার ঘটনায় জড়িত মঞ্জুরুল আলম মোহন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।
বুধবার সকালে বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বাস চলাচল বন্ধ। শুধু ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশা চালু আছে। জনগণ টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ উচ্চ ভাড়ায় অটোরিকশা বা সিএনজি অটোরিকশায় গন্তব্যে ফিরছেন। অনেকে ট্রেনের জন্য স্টেশনে ছুটছেন।
জয়পুরহাটের গৃহবধূ তাসলিমা আকতার জানান, তিনি শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে টার্মিনালে এসেছিলেন। কিন্তু গাড়ি না থাকায় বাড়ি ফিরতে পারলেন না। তিনি ট্রেনের জন্য স্টেশনে যাচ্ছেন।
দুপচাঁচিয়া এলাকার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলী জানান, বাস বন্ধ থাকায় তিনি তিনগুণের বেশি টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে বাড়ি ফিরছেন।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com