সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
রনি ইমরান : এই শহরে অনেকদিনই হলো দেখা যায়না তাকে। আগের মত এসে মাথা নেড়ে পিঠে হাত বুলিয়ে সে বলেনা ‘কেমন আছো বাবা’।
তার মত করে কেউ মনযোগ দিয়ে শোনেনা মনখারাপের সব গল্পগুলা। সেই গল্পগুলা শুনে অতি যন্তে করে কেউ নিজের বুকে তুলে ঠাঁইও দেয়না। জীবনের পড়ন্ত এই বেলায় ভালো নেই কবি ইদ্রিস আলী।
চিরকাল ধরে মানুষের পাশে থেকেছেন সাদা মনের এই মানুষটি। মানুষের ব্যাথাগুলি নিজের বুকে অনুভব করেছেন সকলের অতি আপন জনের মত করে। মানুষকে দেখেছেন মানুষের মত করে। তার স্বভাব আচরণ অনূভুতি সবটাই মানুষের মত।
পাবনার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন সহ সকলের কাছে তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। তিনি প্রিয় অতিচেনা এক পরিচিত মুখ কবি ইদ্রিস আলী।
মোটামুটি ভালোই কাটছিলো তার জীবনের গোধূলী বেলাটা। জীবনের গল্পের চরম সময়টা আসে ২০১৮ সালে। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থমকে যায় তার পথ চলা। মূলত জীবন যুদ্ধের অসহায়ত্বের গল্পটা এখান থেকেই শুরু।
এই সময় থেকেই চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি ইদ্রিস আলী । অনেকদিন পাবনায় ও ঢাকা গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শেষ হলেও শেষ হয়নি তার অসুস্থতা । দিন দিনে শরীরে বাসা বেঁধেছে আরো নানা জটিল অসুখের। বর্তমানে তার শরীরে হিমোগ্লোবিন ও নিউমোনিয়ায় প্রকট সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
ডাক্তারা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। এর জন্য ব্যায় হবে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার মত।
১৯৮১ সাল থেকে তিনি কর্মরত ছিলেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে। সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে দীর্ঘ ৩৫ বছর তিনি চাকুরী করেছেন। ২০১৬ সালে চাকুরী থেকে অবসরে যান। মন দেন লেখালেখিতে। কিন্তু জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।
এখন ইদ্রিস আলীর জীবনের সেই আলোকিত সময়গুলার মত কারো পাশে দাঁড়ানো আর হয়না। অসহায় ছাত্রদের হাতে পরিক্ষার ফী তুলে দিতে পারেনা।
কোনো সাহায্য প্রার্থীকে গোপনে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে পারেনা। সাদা মনের এই মানুষটির নতুন কোনো কবিতা আর ইমেইল যায়না দৈনিক পত্রিকার অফিসগুলাতে । সবার খোঁজ খবর রাখতে রাখতে আজ নিজে নিজেই যেন নিখোঁজ।
অর্থ সঙ্কটে চিকিৎসাহীন হয়ে পড়ে আছেন পাবনা শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর নিজ বাসায়। বিছানায় কাটে তার দিনগুলি। জানালার মাঝে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে পড়ে ফেলা আসা আলোকিত দিনগুলোর কথা।
পাবনায় ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি ‘ফোল্ডার কবিতা’র সম্পাদনা শুরু করেন সাথে প্রকাশ করতে শুরু করেন স্বরনিকা।
দেশের গুণী কবি ওমর আলী পাশে থেকেছেন তিনি। তার স্বরণে আয়োজন করেছে পাবনার কবি সাহিত্যিকদের সংবর্ধনার। পাবনা থেকে প্রকাশিত অনেক দৈনিক পত্রিকা গুলোতে তিনি সাহিত্য পরিষদের সদস্য। নতুন কবিদের উৎসাহও যুগিয়েছেন দীর্ঘকাল।
এখন, তার এই অসহায়ত্ব চিত্র তিনি মানুষকে বুঝতে দিতে চান না। তার চরম এই দূরাবস্থার সকলের একটু সহযোগিতা দরকার। কবি ইদ্রিস আলীর অগনিত ছাত্ররা গোটা দেশে আজ প্রতিষ্ঠিত। অনেকে দেশের নামকরা গুনীজন এবং পবনার শহরে সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গন সহ সকলের কাছে তিনি এক অমায়িক মানুষ।
পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বিবৃতি প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক ইয়াসির আলী মৃধা রতন ইদ্রিস আলী সর্ম্পকে বলেন, ‘ইদ্রিস ভাইয়ের মত সাদা মনের মানুষ এই সমাজে বিরল। খুব অমায়িক মনের মানুষ তিনি। তার চিকিৎসার জন্য সকলের এগিয়ে আসা দরকার।’
কবি ইদ্রিস আলীর ছোট ছেলে সম্রাট বলেন,বাবার জীবনে মানুষের জন্য, দেশের কবিদের জন্য কবিতার জন্য ছুটে গিয়েছেন। মানুষের বিপদে পাশে থেকেছেন।তার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। এতো টাকা যোগার করা সম্ভব হচ্ছে না।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com