মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার তানিয়া খাতুন- এমন খবরে তানিয়া ও তার পরিবারে উচ্ছ্বাসের বান ডাকলেও পরমুহূর্তেই তাদের ঘিরে ধরে দুশ্চিন্তার মেঘ। কারণ আর কিছুই নয়, দারিদ্র্য। অর্থসংকটে তানিয়ার মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তানিয়ার এখন একটাই প্রশ্ন-চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কি তার অধরাই থেকে যাবে!
এলাকাবাসী জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলার কোয়ালীপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবু তালেবের দুই মেয়ে তানিয়া, তিশা এবং দুই ছেলে আট বছরের তামিম ও চার বছরের তরিকুল। চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তানিয়াই সবার বড়। ছেলে তামিম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। উপজেলার তমালতলা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে দুই বোনই জিপিএ ৫ পেয়েছেন।
এরপর নাটোর রানী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে তানিয়া জিপিএ ৫ এবং তিশা জিপিএ ৪ দশমিক ৬৭ অর্জন করেন। দারিদ্র্যকে জয় করে তানিয়া এবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর তিশা খাতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়ে যাচ্ছেন। তানিয়ার সাফল্যে গ্রামবাসী খুশি।
পরিবারেও বইছে আনন্দের বন্যা; কিন্তু সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে আসবে- এ দুশ্চিন্তাই এখন ঘিরে ধরেছে তানিয়া ও তার পরিবারকে।
প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে আবাদ করে কোনোমতে সংসার চালান তানিয়ার বাবা আবু তালেব। দুই মেয়ের আগামী দিনের খরচ কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে তিনি এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সম্বল সামান্য। জমি লিজ দিয়েও তিনি তানিয়ার ভর্তির পুরো টাকা জোগাড় করতে পারেননি। বাবা আবু তালেব জানান, তিশার খরচের পাশাপাশি তানিয়ার মেডিকেলের খরচ চালানোর সঙ্গতি তার নেই। তিনি তার মেয়ের মেডিকেলে ভর্তিসহ লেখাপড়া চালু রাখতে প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তশালীদের সহায়তা কামনা করেছেন।
মা মোমিনা বেগম বলেন, একজন মানুষের আয়েই চলে তাদের সংসার। তানিয়ার মেডিকেলে ভর্তির জন্য তাদের এক চিলতে আবাদি জমি বন্ধক রেখেও ভর্তিসহ লেখাপড়ার সম্পূর্ণ টাকা জোগাড় করা যায়নি।
কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নাজনিন আকতার বলেন, তানিয়া খুব মেধাবী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। মেধার কারণে আমরা সবাই তাকে সব সময় সহায়তা করতাম। তানিয়ার চিকিৎসক হওয়ার বাসনা দীর্ঘদিনের।
মেধাবী তানিয়া বলেন, তার এ সাফল্যে তিনি মা-বাবা, মামা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা আর উৎসাহেই তার এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে চান তিনি। কিন্তু আর্থিক সংকট তার সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com