শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৮:১২ অপরাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ছয় বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
পরিবারটির সবার নিহত হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে দোহারপাড়ায় ছুটে যান অনেকই।
শোকে মুহ্যমান স্বজনদের কেউই মানতে পারছে না যে, দুই ছেলে বাকি চার জনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে। আকস্মিক এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে সবাই। সুষ্ঠু তদন্ত ও নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।
সোমবার (০৫ এপ্রিল) টেক্সাসের আল্যান শহরে বসবাসরত ছয় সদস্যের বাংলাদেশি পরিবারটির সবার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই ছেলে পরিবারের বাকি চার জনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
নিহতরা হলেন— আলতাফুন্নেসা (৭৭), তার মেয়ে আইরিন ইসলাম (৫৬), জামাতা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), দুই নাতী তানভির তৌহিদ (২১), ফারবিন তৌহিদ (১৯) এবং নাতনী, ফারহানা তৌহিদ। ঘটনা শোনার পর এখন শোকে স্তব্ধ দোহারপারা এলাকা।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সকালে নিহতের বাড়ি দোহারপাড়াতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুহ্যমান ওই স্বজনদের যারা সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তারাও অশ্রুসিক্ত।
নিহত আলতাফুন্নেসার ছেলে আবুল কালাম আজাদ হিরন বলেন, তার মা, একমাত্র বোন, বোনের স্বামী, এবং দুই ভাগ্নে এবং এক ভাগ্নির মরদেহ পাওয়া গেছে। সবাই একটি সুখী পরিবার ছিল, পরিবারে কোন অশান্তিও ছিল না। তারপরও কেন এমন ঘটনা ঘটল তা ভেবে পাচ্ছে না পুরো পরিবার।
সর্বশেষ গত শুক্রবার মা ও বোনের সঙ্গে রাতে ফোনে কথা হয়। গত ১ এপ্রিল তার মায়ের দেশে আসার কথা ছিল। উড়োজাহাজের টিকিটও কাটা ছিল। ঈদে দেশে থকার কথা ছিল। কিন্তু যার সঙ্গে তার আসার কথা ছিল তিনি করোনার কারণে দেশে না ফিরবার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় টিকিট বাতিল করা হয়।
মায়ের আসা নিশ্চিত হওয়ায় আমার ভাগ্নে নিউইয়র্ক থেকে এসে নানীর সাথে কিছুটা সময় কাটাচ্ছিল, পরিবারে কোন অশান্তি ছিল না, আকস্মিক কেন এমনটি ঘটল তা আমরা কেই বুঝে উঠতে পারছি না, বলেন হিরন।
তবে, দুই ভাগ্নে পরিবারের চারজনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না বলে জানান তিনি।
আলতাফুন্নেসার আরেক ছেলে আরিফুর রহমান বলেন, এই শোক শেষ হবার নয়। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
তিনি আরও জানান, প্রায় দুই দশক আগে আমার বোন তার স্বামীসহ আমেরিকার নিউইয়র্কে যায়। পরে অন্যরা যায়। সারা জীবন আমাদের এ শোক বয়ে বেড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অ্যালেন শহরের একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, মা, বাবা, বোন ও নানিকে হত্যার পর দুই ভাই আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার কোনো এক সময়ে পরিবারের সবাইকে খুন করে আত্মহত্যা করেন দুই ভাই। পরিবারের সবাইকে খুনের পরিকল্পনা করার পর এক ভাই সম্প্রতি একটি বন্দুক কিনে আনেন বলে স্থানীয় পুলিশ ‘কেএক্সএএস-টিভি (এনবিসি৫)’-কে জানিয়েছে। খবর দ্য ডালাস মর্নিং নিউজ।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেল্টি জানান, ‘ধারণা করা হচ্ছে- ওই পরিবারের দুই ভাই আত্মহত্যা করার ব্যাপারে একমত হন এবং এর আগে তাদের পুরো পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার (হত্যার) সিদ্ধান্ত নেন।’
রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে ডালাস শহরতলির অ্যালেনের পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার ওই বাড়িতে পুলিশ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাওন আহসান জানান, তিনি পরিবারটিকে প্রায় ১১ বছর ধরে চেনেন এবং তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে তিনি ছিলেন।
আহসান বলেছিলেন, তিন সন্তানের জন্য তৌহিদুল ‘গর্বিত’ ছিলেন।
আহমদ হোসেন নামের আরেক বাংলাদেশি জানান, পরিবারটি মূলত নিউইয়র্কের বাসিন্দা হলেও সাত-আট বছর আগে এখানে চলে আসেন।
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই চারজনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে তারা এই কাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’
ফারহান আরও লিখেছেন কীভাবে তিনি নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার বড় ভাইও হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ফারহান লেখেন, তার ভাই বলেছেন, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি, তবে আমরা নিজেদের ও পরিবারকে হত্যা করব।’
নিজেরা আত্মহত্যা করলে পরিবার লজ্জায় পড়বে। তাই লজ্জা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্যদের হত্যা করে নিজেদের আত্মহত্যার কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
সুইসাইড নোটে হত্যার পরিকল্পনার কথাও লেখা আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন। এই নোট থেকে মনে করা হচ্ছে, তারা হতাশায় ভুগছিলেন। পরিবারকে লজ্জা ও কষ্ট থকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই ভাই সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com