বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন
যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস আগামী ২৩ নভেম্বর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজের সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে যোগ্য, সৎ, ক্লিন ইমেজ ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমা রয়েছে এমন নেতাদেরই যুবলীগের নতুন নেতৃত্বে আনা হবে। এমনকি সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকেও কাউকে বড় দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
ক্যসিনোকাণ্ডসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাই ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান শুরু করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পারেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ।
সম্মেলনের মাধ্যমে সৎ, ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব বাছাই করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দলের জন্য যারা নিবেদিত, দলের প্রতি আনুগত্য, শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল এমন লোকদের থেকেই নেতৃত্ব আসবে।’
এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কংগ্রেস প্রস্তুত কমিটির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ সময় নিউজকে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন। ১৯৭২ সালে জাতির পিতার নির্দেশে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মূলত যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস উপলক্ষে সারাদেশের যুব সমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কংগ্রেস উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি করা হয়েছে।’
এবারের কংগ্রেসে কেমন নেতৃত্ব আসবে জানতে চাইলে যুবলীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘এবার নতুন মুখ আসবে বলে আমি আশাবাদী। এখানে কেউ প্রার্থী হন না। অনেকে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন বা নেতাদের কাছে নিজেকে তুলে ধরেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের কংগ্রেসে কখনও ভোট হয়নি। স্বভাবত কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।’
এ বিষয়ে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি সময় নিউজকে বলেন, ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাতির পিতার নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। যুবলীগের অনেক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ২৩ তারিখে যুবলীগের কংগ্রেসে সৎ, ত্যাগী, পরীক্ষিত যাদের ত্যাগ রয়েছে, যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। ১/১১ এর সময় যারা শেখ হাসিনাকে ছেড়ে যায়নি। এবং যাদের সিএস, আরএস রয়েছে, যাদের মধ্যে কোনো ভেজাল নেই এবং দলের প্রতি নেত্রীর প্রতি কমিটমেন্ট রয়েছে সেই ধরনের নেতৃত্বই আমরা প্রত্যাশা করি।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন সময় নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের কারণে দলে ত্যাগী, গতিশীল রাজপথের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই আসছে যুবলীগের শীর্ষ পদে। আমাকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবেই মূল্যায়ন করুক না কেন আমি সেই নেতৃত্ব মেনে কাজ করব। দলের পাশে ছিলাম আগামী দিনও দলের পাশে থাকব, কাজ করে যাব।’
উপত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান সফল করতে যুবলীগের ৭ম কংগ্রেসে তরুণ নেতৃত্ব আসবে। যারা যুবলীগের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে, যারা ত্যাগী, নির্যাতিত এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতিত্বে শতভাগ বিশ্বাস করেন।’
যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুব্রত পাল, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মনজুর আলম শাহীনসহ আরো প্রায় ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতা আলোচনায় আছেন।
এছাড়া যুবলীগের শীর্ষ দুটি পদে আরও আলোচনায় আছেন- যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও তার ছোট ভাই ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বর্তমান কমিটির সদস্য শেখ ফজলে ফাহিম (শেখ সেলিমের ছেলে), যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন ও ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু।
যুবলীগের বর্তমান কমিটির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য শীর্ষ দুই পদের একটিতে আসতে পারেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান আতা, আবদুস সাত্তার মাসুদ, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার নিখিলগুহ প্রমুখ। তবে বয়সের কারণে এদের মধ্যে থেকে কেউ নাও থাকতে পারেন। এছাড়া এবার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতো সাবেক ছাত্রনেতাদেরও দেখা যেতে পারে। এছাড়া যুবলীগে তরুণদের নেতৃত্বে আনলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে শীর্ষ পদে জায়গা পেতে পারেন কেউ কেউ।
২০০৯ সালে যুবলীগের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। মূলত এরপর থেকেই শুরু ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্ষমতার আধিপত্য। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকর্মীর নাম আসে। এমনকি যুবলীগ চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আসে। তাই দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সংগঠনটিকে আরও গতিশীল করতে সম্মেলন করার নির্দেশ দেয় দলের হাইকমান্ড।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com