মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক: গুলশান হামলার রেশ না কাটতেই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলায় এক কনস্টেবল নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে শেলাকিয়া মাঠের আড়াইশ মিটারের মধ্যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে কিশোরগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদরদপ্তর ) ওবায়দুল হাসান জানান।
পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারীও নিহত হয়েছে বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনায় শোলাকিয়া মাঠের জামাতে অংশ নিতে জড়ো হওয়া লাখো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। অবশ্য আধা ঘণ্টা পর নতুন কোনো গোলযোগ ছাড়াই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
ওবায়দুল হাসান শোলাকিয়া থেকে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ককটেল জাতীয় কিছুর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে এখনও সব কিছু স্পষ্ট নয়।”
হামলার পর পুলিশসহ ১১ জনকে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে জহুরুল হক (৩০) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানান।
শোলাকিয়া মাঠে উপস্থিত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খানও এ সময় হাসপাতালে ছুটে যান।
পরে আহতদের মধ্যে ছয় পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন জানান।
ঈদ জামাতে অংশ নিতে অনেকেই ওই স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠে আসছিলেন। এ সময় স্কুল ফটকের কাছে বসানো পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা চালানো হয়।
শোলাকিয়া মাঠ থেকেও ওই শব্দ পাওয়া যায়। আর মাঠে যাওয়ার পথে সামনে বিস্ফোরণ আর ছুটোছুটি দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা।
হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে একটি টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়। তবে হামলাকারী কয়জন ছিল সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বোমা হামলার পর হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান। পরে বিজিবি সদস্যরাও সেখানে যান।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর ঐতিহ্য্যবাহী এ ঈদগাহ প্রতি ঈদে নামাজ পড়তে আসেন লাখো মানুষ।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে এই ঈদগাহ চালু করেন। প্রথম জামাতে সেখানে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। পরে উচ্চারণের বিবর্তনে তা পরিণত হয় আজকের নাম শোলাকিয়ায়।
ঈদ জামাতে দূর দূরান্ত থেকে মুসুল্লিদের আসার সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহতের পর এবার দেশের প্রধান সব ঈদ জামাতেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থ করা হয়।
শোলাকিয়াতেও ওয়াচ টাওয়ার থেকে এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ঈদের সকাল থেকে ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক র্যাব ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিলেন বলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com