বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি : শুধুমাত্র নিজেদের বাণিজ্য ঠিক রাখতে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় অনেক কেজি স্কুলের মালিকরা স্কুল খুলে ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি ঘোষণাকে তারা অমান্য করেছেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছেন তারা।
সাঁথিয়া-বেড়া উপজেলার সংযোগস্থল কাশিনাথপুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ (কিন্ডারগার্টেন) কেজি স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারি নির্দেশকে রীতিমত লংঘন করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন।
কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে। সেখানে কর্মরত শিক্ষকরাও ক্লাস নিচ্ছেন।
এছাড়াও বেড়া উপজেলার আমিনপুর, কাজীরহাট, মাশুন্দিয়া, নতুনভারেঙ্গা, কৈটোলা এলাকার প্রায় ২০টি কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছে স্বাধীনমতো খুলে দিয়েছেন।
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা, শহীদনগর, পুন্ডুরিয়া, জোড়গাছা, শোলাবাড়িয়া ও কাশিনাথপুর এলাকার অন্তত ১৫টি কিন্ডারগার্টেন মালিকরা প্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস ও কোচিং করানো শুরু করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কেজি স্কুল মালিক বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ক্লাস চালু করা হয়েছে। ভাবনাটি কি তাদের বেশী না সরকারের? এ প্রশ্নের কোন সদুত্তোর তারা দিতে পারেননি। কিছু কেজি মালিক উল্টা সরকারকে দোষ দিচ্ছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কার্যত কেজি মালিকরা ক্লাস চলাকে ব্যবসা হিসেবে দেখেন।
কারণ হিসেবে কেজি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের বেতন দেয়া হয় মাসে এক হাজার থেকে পনেরশ’ টাকা। পুরা লাভ মালিকরা নেন। তারা সেবা হিসেবে প্রতিষ্ঠান করলে শিক্ষকদের এত কম টাকায় খাটাতেন না।
স্থানীয় বেশ কিছু অভিভাবক জানান, ক্লাস চলছে নামকাওয়াস্তে। ক্লাসের আড়ালে চলছে কোচিং বাণিজ্য। এটা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও তারা সরকারি আইন অবজ্ঞা করছেন।
বাচ্চা কেজি স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের চাপ দেয়া হচ্ছে। যেসব অভিভাবক দ্বিমত পোষণ করছেন, তাদের বাচ্চাকে বহিষ্কারের ভয় দেখানো হচ্ছে।
কিছু বাচ্চাকে যেতে দেখে অন্য বাচ্চারাও কান্নাকাটি করায় তাদের কেজি স্কুলে দিতে হচ্ছে বলে বেশ কিছু অভিভাবক জানান। কিন্তু তারা সব সময় আশংকায় থাকেন বলে অনেক অভিভাবক জানান।
সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টিতে নজর ও গুরুত্ব না দেয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে বেশ কিছু সচেতন জনগণ অভিযোগ করেছেন।
সাঁথিয়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, তাদের স্কুলের বাচ্চারা মানহীন সব কেজি স্কুলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।
তারা জানান, সে সব কেজি স্কুলে যে সব শিক্ষক আছেন তারা তো ৪র্থ-৫ম শ্রেণির ক্লাসই ঠিকমত নিতে জানেন না।
শিক্ষকরা বলেন- আসলে সাময়িক ভাল মনে হলেও তারা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফাজ্জাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে গত দুইদিন পূর্বে বেড়া উপজেলার আমিনপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করে দিয়েছি।
এরপরে তারা ক্লাস পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা খবির উদ্দিনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদ জানান, তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। যেসব কেজি স্কুল এভাবে সরকারি ঘোষণা লংঘন করছে তাদের ঠিকানা দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
© All rights reserved 2021 ® newspabna.com