বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
বার্তাসংস্থা পিপ : বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ দুই দিকপাল রণেশ মৈত্র ও এম আনোয়ারুল হককে সংবর্ধনা ও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (০২ মে) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের ৫৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
রণেশ মৈত্রের বয়স ৮৪ বছর ও আনোয়ারুল হকের বয়স ৭৬ বছর। তাঁরা দুজন প্রায় ছয় দশকের বন্ধু ও সহকর্মী। দুজনেই ভাষাসৈনিক। ১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের দুজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এ ছাড়া পাবনা প্রেসক্লাবের ৫৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা, কেক কাটাসহ নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকালে প্রেসক্লাব চত্বর থেকে সাংবাদিক ও সুধীজনের সমন্বয়ে একটি মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগের সভাপতিত্বে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির প্রমুখ।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রণেশ মৈত্র ও আনোয়ারুল হক বক্তব্য দেন। সন্ধ্যায় বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ৫৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান শেষ হয়।
১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা শহরে পাবনা প্রেসক্লাবের গোড়াপত্তন হয়। সারা দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন থাকলেও পাবনা প্রেসক্লাব সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই প্রতিষ্ঠান এখনো দেশের মধ্যে অখণ্ড এবং ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
পদ্মা-যমুনা বিধৌত এবং ইছামতি নদীর তীরের জনপদ পাবনায় সাংবাদিকতার সূত্রপাত ঘটে উনিশ শতকের প্রথম দিকে। এ অঞ্চলের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এবং অসহায় নির্যাতিত মানুষের চালচিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার ব্রত নিয়ে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন।
সাংবাদিকদের সেই প্রচেষ্টায় বিশ শতকের ষাটের দশকের শুরুতে তৃণমূল সাংবাদিকদের পেশার স্বীকৃতির দাবিকে সামনে রেখে ১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা শহরে স্থাপিত হয় পাবনা প্রেসক্লাব।
পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘পাক হিতৈষী’র প্রকাশক-সম্পাদক, দৈনিক আজাদ ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) পাবনা প্রতিনিধি এ কে এম আজিজুল হকের (বিএসসি, ক্যাল.) সভাপতিত্বে তাঁর বাসা সানভিউ ভিলায় অনুষ্ঠিত সভায় তাঁকে (এ কে এম আজিজুল হক) পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি রণেশ মৈত্রকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত করা হয়। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের পাবনা প্রতিনিধি এম আনোয়ারুল হক, বিশিষ্ট চিকিৎসক মেজর (অব.) ডা. মোফাজ্জল হোসেন, লোকশিক্ষক শহীদ মাওলানা কছিমুদ্দিন আহমেদ, ফটোসাংবাদিক হিমাংশু কুমার বিশ্বাস প্রমুখ প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম সদস্য ছিলেন। বর্তমানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্যসংখ্যা ৫৬।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মাশাল (অব.) এ কে খন্দকার, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী, ভাষাসৈনিক প্রয়াত আবদুল মতিন, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মুহম্মদ শাহাবুদ্দিন চপ্পু পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানিত আজীবন সদস্য।
প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছর ৮-৯ মে পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলন। সেই সভা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতি, যা বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি হিসেবে পরিচিত। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বগুড়ার মো. হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক আবদুস সালাম, মর্নিং নিউজের এস জি এম বদরুদ্দিন। যে সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা পেশার স্বীকৃতি তথা রিটেইনার, লাইনেজ, পোস্টাল চার্জ, টেলিগ্রাম চার্জ, ছবির বিলসহ অন্যান্য খরচ পাওয়া শুরু করেন। পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই সেদিন সংবাদপত্রে মফস্বলে কর্মরত প্রতিনিধিদের পেশার স্বীকৃতি ঘটেছিল।
পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর এ কে এম আজিজুল হক পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি রণেশ মৈত্র প্রথম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে এম আনোয়ারুল হক, মির্জা শামসুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বাসু, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট মুহম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক শিবজিত নাগ, আবদুল মতীন খান, এবিএম ফজলুর রহমান, অধ্যাপক রুমি খন্দকার, উৎপল মির্জা ও আহমেদ উল হক রানা বিভিন্ন সময় এক বা একাধিকবার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে শিবজিত নাগ সভাপতি ও আখিনুর ইসলাম রেমন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com