বার্তাকক্ষ : যুগের পরিবর্তনে এবং কালের পরিক্রমায় মানুষের অনেক কর্মযজ্ঞ এবং স্মৃতি চিহ্নই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু শুধু নিশ্চিহ্ন হয় না তার কর্মক্ষেত্রের ঐতিহ্য মন্ডিত ইতিহাস। ইতিহাস তার নিজের গতিতেই চলে। ইতিহাস কখনও মুছে যায় না।
এমনকি শত চেষ্টা করেও ইতিহাসের অমোঘ সত্য ঘটনাবলী এবং প্রচার-প্রচারণাকে চাপা রাখা যায় না।
আর তাইতো পাবনাবাসী যুগ যুগ ধরে স্মৃতিচারিত করছে জমিদার আজিম চৌধুরীর নাম ও তার কর্মযজ্ঞ।
আনুমানিক আড়াইশ বছর আগে সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আজিম চৌধুরীর জন্ম হয়। তার পিতার নাম রহিম উদ্দিন চৌধুরী।
তত্কালে নাটোরে অবস্থিত রাজশাহীর কালেক্টর অফিসের পেস্কার উক্ত রহিম উদ্দিন মূলত চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও প্রকৃত পক্ষে তার পুত্র আজিম চৌধুরীর সময়েই দুলাইসহ আশপাশের এলাকায় তাদের জমিদারীর চরম উত্কর্ষ সাধিত হয়।
এই খ্যাতিমান পুরুষ তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা এবং প্রজ্ঞা দিয়ে তত্কালে ওই এলকায় জমিদারী করার পাশাপাশি দুলাইতে ২-৩টি নীল কুঠি স্থাপন করেন।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল জমিদারী আয়ের সাথে নীল কুঠির আয় যোগ হলে এক সময় তিনি সীমাহীন অর্থ বিত্তের মালিক হন। আর মূলত সেই সময় থেকেই তার জমিদারিত্বের উত্থান এবং সুনাম পাবনাসহ আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
তার জমিদারী আমলে এলাকায় অত্যন্ত কঠোর শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল। প্রজাগণ যথাসময়ে খাজনা প্রদানসহ জমিদার আজিম চৌধুরী ঘোষিত যে কোন নিয়মনীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলতেন।
তিনি কঠোর হস্তে তার জমিদারী এলাকার সকল প্রকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে তার উদারতা এবং মহত্ত্বেরও তুলনা ছিল না। কোন প্রজা যদি অভাব অনটনের কারণে কোন বছর খাজনা পরিশোধ করতে অসমর্থ হতো তাহলে তিনি তার বাত্সরিক সমুদয় খাজনা মওকুফ করে দিতেন।
তাছাড়া তিনি মুসলিম জমিদার হলেও সর্বদা এলাকার হিন্দু সমপ্রদায়ের সাথে ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে চলতেন। শুধু তাই না সে সময় তিনি হিন্দু সমপ্রদায়কে পূজা পার্বণে উত্সাহিত করার জন্য প্রতি বত্সর জমিদারী দরবারের পক্ষ থেকে দুলাই বাজারে শারদীয় দুর্গোত্সবেরও আয়োজন করতেন।