শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৫০ অপরাহ্ন
সুজানগর প্রতিনিধি : পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের বিন্যাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনও। ফলে সময় যতই পার হচ্ছে, বিদ্যালয়ের ভবনটি ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গত বছরের ২৯ মে পরিদর্শনে এসে বিদ্যালয়ের মন্তব্য খাতায় ‘বিদ্যালয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এখানে ক্লাস করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ এ কথা লিখেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা।
এখন ভবনের দেয়ালে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। দরজার ওপরের ঢালাই ভেঙে বাঁশের বাতা (বাঁশের তৈরি লম্বা লাঠি) বেরিয়ে এসেছে। তারপরও ভবনের বিভিন্ন কক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদ এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০ সালে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে দুই দফায় পাঁচটি কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় কিছুদিন পর থেকেই ভবনের পলেস্তারা খুলে পড়তে শুরু করে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল এলাকায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। পাঁচ কক্ষের একটি মাত্র পুরোনো ভবন। মেঝে স্যাঁতসেঁতে, মাটি সরে ফেটে গেছে। ভবনটির অধিকাংশ কক্ষের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেয়ালগুলোতে তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। দুটি কক্ষের দরজার ওপরি ভাগে ঢালাই ভেঙে বেরিয়ে এসেছে বাঁশের লাঠি।
স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষকদের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী ও সঠিক উপকরণে ভবনটি তৈরি হয়নি। লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল বাঁশের লাঠি। ফলে অল্প দিনেই ভবনের অধিকাংশ স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের ভেতর থেকে বাঁশের লাঠি দেখা যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফজলুল হক বলেন, ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় অভিভাবকেরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। শিশু শিক্ষার্থীরাও সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রানী খাতুন বলে, ‘ভাঙা বিল্ডিংয়ের জন্যি মা স্কুলি আসপের দিবের চায় না। তাও সারগের ভয়ে আসি। তয় খুব ভয়ে থাকি।’ একই ক্লাসের শিক্ষার্থী কেয়া খাতুন বলে, ‘বৃষ্টির দিনে ভবনটির দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ে। একটু জোরে বাতাস হলে ভবন কাঁপতে থাকে। তখন ক্লাসের বাইরে চলে যাই।’
গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়ে ভয়ের মধ্যি থাকি।’ তিনি বলেন, এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে ভবনটিও মেরামত প্রয়োজন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার পর থেকে বিষয়টি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবাই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুদের ক্লাস করাতে হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভবনেই ক্লাস করাতে হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে জানিয়েছি।’
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণকাজের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সেই সঙ্গে বরাদ্দ পেলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
© All rights reserved 2020 ® newspabna.com